চীনকে রেশমের জন্মভূমি বলা হয়৷ দীর্ঘ ২৫০০ বছর রেশম চাষের পদ্ধতি তারা গোপন রাখলেও তা ভারতবর্ষসহ অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷ ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীর মোঘল আমলে ভারতে প্রচুর রেশম উত্পাদিত হ’তো ৷ নবাব আমলে তত্কালীন বৃহত্তর বাংলাদেশে রেশম উত্পাদনে যথেষ্ট উন্নতি হয়৷ বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ১৯১৪ সালে বাংলাদেশে রেশম উন্নয়নের জন্য আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ভাগে দু’টি রেশম বীজাগার এবং কিছু বেসরকারী রেশম অধ্যুাষিত এলাকা পড়ে বীজাগার দু’টো বগুড়া ও মীরগঞ্জে (রাজশাহীতে) অবস্থিত ৷ বেসরকারী রেশম উত্পাদন এলাকা ছিল ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) ও মীরগঞ্জে৷ ১৯৪৭ সালের পাক ভারত বিভক্তির পর ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রেশম কার্যক্রম শিল্প ও বাণিজ্য বিভাগের অধীনে ন্যস্ত ছিল৷ ১৯৬০-৬১ সালে রেশম কার্যক্রম ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্হা (ইপসিক)র অধীনে ন্যস্ত হয়৷ এ সময়ে রোগমুক্ত রেশম ডিম উত্পাদন করার জন্য মীরগঞ্জ ও বগুড়া ছাড়া আরও ১০টি রেশম বীজাগার, রেশম চাষ বিস্তারের জন্য ২২টি রেশম সম্প্রসারণ ও প্রদর্শনী কেন্দ্র, রেশম চাষীদের উত্পাদিত রেশম গুটি ক্রয় এবং রেশম সামগ্রী তৈরীর জন্য রাজশাহী রেশম কারখানা এবং রেশমের উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট স্হাপন করা হয়৷ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সমগ্র রেশম কার্যক্রম বিসিক-এর আওতায় পরিচালিত হ’তো ৷ঐতিহ্যবাহী রেশম শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেশম বোর্ড গঠিত হয়। পরবর্তীতে ০৬ মার্চ/২০১৩ সালের ১৩ নং আইন বলে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড, রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট এবং সিল্ক ফাউন্ডেশন এই ৩টি প্রতিষ্ঠানকে একীভুতকরণের মাধ্যমে পূর্ণগঠিত হয় “বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড” যা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান। যার প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে অবস্থিত। ইহা একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান।
১। | রেশম বিষয়ক বৈজ্ঞানিক, কারিগরি ও আর্থিক গবেষণা ও প্রশিক্ষণের জন্য উদ্যোগ সহায়তা এবং উৎসাহ প্রদান; |
২। | গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলসমূহ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ ও উহা বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণ এবং বর্তমানে সংরক্ষিত ও ভবিষ্যতে সংগৃহিতব্য সকল রেশম পোকার জাত সংরক্ষণ নিশ্চিতকরণ; |
৩। | তুঁত, ভেরেন্ডা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উদ্ভিদের উন্নতজাতের চাষাবাদের পদ্ধতি উদ্ভাবন; |
৪। | উন্নতজাতের সুস্থ পলুপোকার ডিম পালন, উদ্ভাবন ও বিতরণ; |
৫। | রেশম গুটি হইতে সুতা আহরণ এবং কাঁচা রেশমের মান উন্নত ও উত্পাদন বৃদ্ধি প্রয়োজনে সকল কাঁচা রেশম যথাযথভাবে যন্ত্রপাতি সজ্জিত স্বয়ংসম্পূর্ণ সিল্ক কন্ডিশনিং হাউস এর মাধ্যমে পরীক্ষা ও গ্রেডিং করার পর বাজারজাতকরণের বাধ্যবাধকতার গ্রহণ; |
৬। | চরকা রিলিং ও ফিলেচারে নিয়োজিত ব্যক্তিদিগকে কারিগরি পরামর্শ প্রদান; |
৭। | কাঁচা রেশম ও রেশম পণ্যের মান উন্নয়ন; |
৮। | রেশম চাষ ও রেশম শিল্পের উপর বিভিন্ন উপাত্ত সংগ্রহ ও গ্রন্থনা; |
৯। | রেশম চাষ ও রেশম শিল্পের সহিত সংশ্লিষ্টদের ঋণদানের সুবিধাদি সৃষ্টি; |
১০। | ন্যায্যমূল্যে রেশম শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামালসহ রং, রাসায়নিক দ্রব্যাদি, খুচরা যন্ত্রাংশ ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি সিল্ক রিলার, উইভার ও প্রিন্টারদেরকে সরবরাহের ব্যবস্থা; |
১১। | দেশে-বিদেশে রেশম ও রেশম সামগ্রী জনপ্রিয় ও বাজারজাতকরণের জন্য প্রচারের ব্যবস্থা; |
১২। | রেশম সামগ্রী রপ্তানী করিবার জন্য রেশম সামগ্রীর মানোন্নয়নের সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং সিল্ক রিলার, রিয়ারার, স্পীনার, উইভার এবং প্রিন্টাদেরকে প্রশিক্ষণদানের সুবিধা সুজন; |
১৩। | রেশম চাষ ও রেশম শিল্পে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সাধারণ সুবিধার জন্য প্রকল্প প্রণয়ন, পরিচালনা বাস্তবায়ন; |
১৪। | কাঁচা রেশম, স্পান সিল্ক ও রেশম পণ্য উত্পাদনের জন্য মিল স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ; |
১৫। | সেস(cess) আদায়; |
১৬। | উপরি-উক্ত কার্যাদি সম্পাদনের ক্ষেত্রে যেইরূপ প্রয়োজনীয় বা সুবিধাজনক হয় সেইরূপ আনুষঙ্গিক বা সহায়ক সকল বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং |
১৭। | সরকার কর্তৃক আরোপিত রেশম উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট অন্য যে কোন দায়িত্ব পালন৷ |