সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ৬ অক্টোবর ২০২০

রেশম চাষের সুবিধা এবং অর্থনৈতিক দিক

রেশম একটি কৃষি নির্ভর শ্রমঘন গ্রামীণ কুটির শিল্প। পরিবারের আবালবৃদ্ধবনিতা, বেকার, বিশেষ করে মহিলারা এই পরিবার কেন্দ্রিক কর্মকান্ডের সংগে জড়িত হয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
অন্যান্য ফসলের তূলনায় রেশম চাষে অধিক লোকের কর্মসংসহান হয়। ১ হেক্টর জমিতে রেশম চাষ করলে ১২/১৩ জন লোকের কর্মসংসহান হয় যেখানে অন্য ফসলে ৪/৫ জনের বেশী হয় না।
রেশম চাষে বছরে কমপক্ষে ৪/৫ বার ফসল ফলানো যায় এবং অধিক অর্থ উপার্জন করা যায়।
আবাদী, অনাবাদী, রাস্তার ধার, বাড়ীর আশপাশের খন্ডিত জমি, বাঁধের ধার, জমির আইল প্রভৃতি যে কোন পতিত জমিতে তুঁত গাছের আবাদ করা যায়।
তুঁতগাছ ৩০-৩৫ পর্যন্ত বছর বাঁচে ।
একবার এ গাছ লাগালে এবং সীমিত যত্নের মধ্যে রাখলে দু'মাস পর পর এ গাছ থেকে এক নাগাড়ে ৩০-৩৫ বছর পলুপালন করে অর্থ রোজগার করা যায় ।
তুঁত গাছের শিকড় মাটির অতি গভীরে যায়। যে কারনে খরার সময় বৃষ্টিপাত না হলে বা সেচ না দিতে পারলেও মোটামুটিভাবে ফসল হয় যা অন্যান্য কৃষি ফসলে  হয় না।
এ শিল্পে তূলনামূলকভাবে অল্প মুলধন কাজে লাগিয়ে অধিক অর্থ উপার্জনের ব্যবসহা নেয়া যায় ।
৩/৪ হাজার টাকা নিয়ে রেশম গুটি উৎপাদন, ৮/১০ হাজার টাকা নিয়ে রেশম সূতা উৎপাদন এবং ১৫/২০ হাজার টাকা  নিয়ে কাপড় উৎপাদনের কাজ করা যায়।
এত অল্প পুঁজি নিয়ে অন্য কোন চাষ বা অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িত হওয়া যায় না।
এ শিল্পের কারিগরি বিষয়গুলো সহজে বুঝা যায়। অশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত যে কোন মেয়ে পুরুষ এসব বিষয় সহজেই রপ্ত করতে পারেন ।
গরীব ও প্রান্তিক চাষীদের পরিবারের বাড়তি আয় উপার্জনের জন্য এ শিল্প অত্যমত সহায়ক ।
গ্রামের মানুষকে শহরমুখী না করে গ্রামে অবসহান করে আয়ের পথ সুযোগ করার ক্ষেত্রে এ শিল্প অতুলনীয় ।
রেশম শিল্পের কোন বস্তুই অপ্রয়োজনীয় নয়। রেশম চাষের মাধ্যমে রেশম গুটি উৎপাদন করা যায় যা মূল ফসল ।
তুঁতগাছের ডালপালা থেকে জ্বালানী, ফল থেকে জ্যাম-জেলী, শিকড় থেকে রং, ছাল থেকে কাগজ তৈরী হয়।
পলুর মল উৎকৃষ্ট জৈব সার, উচ্ছিষ্ট তুঁতপাতা গবাদি পশুর খাদ্য, এমনকি মরা পলুও হাস মুরগীর উৎকৃষ্ট খাদ্য।
রিলিং এর ফেঁসো, ঝুট, টোপা প্রভৃতি চরকাতে কেটে স্পান সূতা তৈরী করা যায়।
বয়নকালে বিভিন্ন বর্জ্য পুনরায় কার্পেট উৎপাদনে ব্যবহার করা যায় ।
এ শিল্পে ব্যবহুত ডালা, চন্দ্রকী, জাল, কাটঘাই, তাঁত মেশিন প্রভৃতি অতি সাধারন সরঞ্জাম। এগুলো গ্রামেই অতি অল্প ব্যয়ে তৈরী করা যায়
রেশম গুটি বছরে কমপক্ষে ৪/৫ বার উৎপাদন করা যায়।
মার্চ মসের শেষে চৈতা ক্রপ, জুন মাসের প্রথমে জ্যৈষ্ঠা ক্রপ, আগষ্ট মাসের শেষে ভাদূরী ক্রপ এবং নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি অগ্রহায়নী ক্রপের রেশম গুটি উৎপাদিত হয় ।
এ সময়ে  চাষীদের ঘরে অন্য তেমন কোন  অর্থকরী কৃষি ফসল থাকে না। যে কারণে এ চাষের ফলে চাষীরা অসময়ে অর্থ হাতে পাওয়ার সুযোগ পান ।
গ্রামের শিক্ষিত বেকার যুবকদের আত্মকর্ম সংস্থানে এ শিল্প বিশেষভাবে সহায়ক ।
রেশম সূতা, বস্ত্র ও তৈরী পোষাক  বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প এবং গ্রামের গরীব জনগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার মান উন্নয়নসহ দারিদ্র্য বিমোচনে এ শিল্প অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

 

loading.., please reload